আপওয়ার্কে প্রথম জব কিভাবে পাবেন?

by মুহাদ্দাস নাইম

আপওয়ার্কে প্রথম জব পেতে এবং সফল হতে চাইলে শুরুতেই কিছু ব্যাপারে নিজের অভ্যাস পরিবর্তন করে নিতে হবে। এবং সেই সাথে সামনে এগোতে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। একবার সঠিক চেষ্টায় প্রথম কাজটি পেয়ে গেলে এরপর থেকে আর কাজ পেতে তেমন কষ্ট হয় না।

অলসতা কাটিয়ে তুলুনঃ

ফ্রীল্যান্সার হতে হলে আপনাকে কাজ করতে হবে। যদি আপনি অলসতা এবং কাজে মন না দিয়ে সময় নষ্ট করতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে শুরুতেই বলে দেয়া ভালো এই মার্কেটপ্লেস আপনার জন্য না। যারা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সমূহে সময় দিতেই বেশি পছন্দ করেন তারাও এখান থেকে দূরে থাকতে পারেন। কেননা এখানে কাজ পেতে এবং সফল হতে আপনাকে কাজ করতে হবে এবং প্রচুর সময় দিতে হবে। যদি আপনি অলসতা এবং অন্য কোথাও নিজেকে ব্যস্ত রাখা থেকে সরিয়ে আনতে পারেন তাহলে আপনার কাজের দক্ষতা এবং কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ৫০% বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।

ধৈর্য ধারণ করতে শিখুনঃ

আপনি প্রচুর শ্রম এবং সময় দিচ্ছেন তবুও প্রথম কাজ পাচ্ছেন না? চেষ্টা করতে করতে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন? তাহলেও ধৈর্য ধরে থাকতে চেষ্টা করুন। প্রথম কাজটি পেতে আপনাকে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে আবার কখনো মাসও। আমার ক্ষেত্রে প্রথম কাজটি পেতে ১৫ দিন সময় লেগেছিলো। যা ধৈর্য ধারণের কারণেই সম্ভব হয়েছে। যদি আপনি কোন ক্লাইন্টের থেকে রেস্পন্স না পান, ধৈর্য না হারিয়ে বরং কেন পাচ্ছেন না তা খুঁজতে চেষ্টা করুন এবং তার সমাধান করুন। কিভাবে তা পরবর্তী পয়েন্টগুলো থেকে ধারণা পেতে পারেন।

আপনার প্রোফাইল আলোকিত করুনঃ

আপওয়ার্কে প্রোফাইল তৈরি করার সময় সকল বিষয়বস্তু যেমন স্কিল, অবস্থা, আগের কাজের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সুন্দর করে গুছিয়ে লিখুন। সেই সাথে কিভাবে কাজ করতে আপনি পছন্দ করেন এবং কিভাবে কাজ করতে চান তাও বর্ণনা করুন। তবে সব কিছু ৩/৪ টি প্যারাগ্রাফের ভিতর এবং সর্বোচ্চ ১০০০ শব্দের ভিতর লিখতে চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় শব্দ এবং লম্বা লাইন যথা সম্ভব এড়িয়ে যান। কেননা বিশাল লিখা ক্লাইন্টকে বোর করে তুলতে পারে।

আপনার জ্ঞানের পরীক্ষা নিনঃ

আপওয়ার্কে সকল স্কিলের উপরেই পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যেসকল স্কিল নিয়ে কাজ করতে চান সেসকল স্কিলে আপনার জ্ঞান কেমন তা ক্লাইন্টকে দেখাতে পরীক্ষায় অংশ নিন। চেষ্টা করুন সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করে ক্লাইন্টকে বুঝিয়ে দিতে যে আপনি আসলেই পারবেন। তবে আপনার স্কিলের বাইরের কোন স্কিলে পরীক্ষা দিতে যাবেন না।

পোর্টফলিওঃ

খেয়াল রাখুন আপনার পোর্টফলিও যেন খালি না থাকে। যথা সম্ভব সুন্দর করে পোর্টফলিওগুলো সাজিয়ে নিন। যদি পোর্টফলিও না থাকে, তাহলে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে বা ফ্রীতে কোন ক্লাইন্টের (আপওয়ার্কের বাহিরে) জন্য কাজ করে হলেও ভালো কিছু পোর্টফলিও বানিয়ে নিন। যদিও এখন তেমন কেউ পোর্টফলিও দেখে কাজ দেয় না তবে অনেক ক্ষেত্রেই হটাত পোর্টফলিওগুলোই বেশি সহায়তা করে কাজ পেতে। তাছাড়া কাজের জন্য বিড করার সময়েও আপনি পোর্টফলিও দেখিয়ে কাজ নেয়ার চেষ্টা করতে পারবেন।
নিজেকে প্রফেশনাল দেখাতে চেষ্টা করুনঃ
নিজেকে যথা সম্ভব প্রফেশনাল হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনার প্রোফাইলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সঠিকভাবে ছবি বাছাই করা তাই খুব ইম্পরট্যান্ট। কোন প্রোগ্রামে গিয়ে তোলা ছবি বা কলেজের রিইউনিয়নের ছবি ব্যবহার করলে আপনি কতটা প্রফেশনাল তা কেউ বুঝতে পারার কথা না। চেষ্টা করুন ফর্মাল ছবি আপলোড করতে।
সাবধানে প্রোজেক্ট ডেসক্রিপশন পড়ুনঃ
অনেকেই এই কাজটি ভুল করার কারণেই সবচেয়ে বেশি কাজ হারায়। সম্পূর্ণ প্রোজেক্ট ডেসক্রিপশনটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। ক্লাইন্ট কি চাচ্ছে, কিভাবে চাচ্ছে সব বুঝতে চেষ্টা করুন। এরপর প্রোজেক্টে বিড করতে ডেসক্রিপশন অনুসারেই কভার লেটার পাঠান। মনে রাখবেন এটাই হবে আপনার আর ক্লাইন্টের প্রথম কথোপকথন। তাই শুরুতেই যদি ভুল থাকে, প্রোজেক্ট না পাবার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি আপনি প্রোজেক্টটির জন্য সঠিক স্কিল না রাখেন তাহলে বিড করবেন না। কেননা কাজটি পেলেও হয়তো আপনার সফলভাবে সম্পূর্ণ করতে পারার সম্ভাবনা কম।
কভার লেটার তৈরিঃ
কভার লেটার তৈরি করতে কোন টেম্পলেট ব্যবহার করবেন না। বরং ৩০০/৪০০ শব্দের ভিতর চেষ্টা করুন ক্লাইন্টের প্রোজেক্ট ডেসক্রিপশন নিয়েই সব বুঝিয়ে বলতে। যেমন সে ঠিক কি কি সমস্যার জন্য প্রোজেক্ট দিচ্ছে, সেখানে কি কি ব্যাপার বা ভুল আছে সেগুলোর কিছু বর্ণনা, কিভাবে আপনি কাজটি করতে চান ইত্যাদি। তবে কাজটি করার গাইড লাইন দিয়ে দিবেন না। শুধুমাত্র আপনি যে সমাধান করতে পারবেন তাই বর্ণনা করুন বা বুঝিয়ে দিন। যদি ক্লাইন্ট আপনার কভার লেটারটি পড়ে এবং বুঝতে পারে আসলেই আপনি কাজটি বুঝেছেন এবং সমাধান করতে পারবেন সেভাবেই লিখুন। যেহেতু আপনি নতুন, হয়তোবা আপনার কাজের ফীডব্যাক নেই। তাই কভার লেটার এবং আপনার প্রোফাইলই পারবে আপনাকে প্রথম কাজটি এনে দিতে।
অল্প রেটে কাজ করতে চাইবেন নাঃ
আপওয়ার্কে প্রথম জব পাওয়ার জন্য অল্প টাকায় কাজ করবো বা ইচ্ছে করেই অল্প চাইবো, এরকমটা করা যাবে না। কেননা এটা আপওয়ার্কের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে যার কারণে আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হতে পারে। অল্প না চেয়ে বা রেট না কমিয়ে বরং আপনি সার্ভিস অনুসারে যে পারফেক্ট রেটই বলছেন সেটাই ক্লাইন্টকে বুঝাতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় ক্লাইন্টরা বরং অল্প রেটে কাজ বলতে সস্তা মানের কাজকেই বুঝে থাকে যার ফলে তারা কাজে হায়ার করতেও আগ্রহী হয় না। তাই রেট না কমিয়ে নিজের ভ্যালু ধরে রাখুন। আর চাইলে ভ্যালু বা রেট না কমিয়ে বরং ২০% ছাড় দিন। মেনশন করেই যে আপনি প্রথম কাজ বলে একটি ছাড় দিচ্ছেন। এতে আপনার ভ্যালুও ধরে রাখা হচ্ছে আবার কম রেট বলে নিয়ম ভঙ্গ হওয়ার চান্সও হচ্ছে না।
হাল ছাড়বেন নাঃ
কোনভাবেই হাল ছাড়বেন না। চেষ্টা করতে থাকলে এক সময় না এক সময় এর ফল পাবেনই। যদি এমন হয় যে কোন নির্দিষ্ট ভুলে বা স্কিলের অভাবে সফল হতে পারছেন না তাহলে সেই ভুল সংশোধন করুন। অথবা স্কিল আরো ডেভেলপ করুন। ফ্রীল্যান্সার হিসেবে সফল হতে পরিপূর্ণ স্কিল বিকল্প নেই। আর চেষ্টা করতে থাকুন। সফলতা আসবেই।

You may also like