বিজয় দিবস

by মাহবুব সজল

বিজয় দিবস

প্রতিটি জাতির জীবনেই বিজয় দিবস এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিজয় দিবস প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাঙালির জাতীয় জীবনে অপরিসীম আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে । বিজয় দিবসের এই দিনটি বাঙালি জাতিসত্তার আত্মমর্যাদা, বীরত্ব এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস :

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল। ৩০ লক্ষ শহিদের জীবন উৎসর্গ, অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ এর এই দিনে পৃথিবীর মনচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে । তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয়, আনন্দময় এবং গৌরবের দিন।

ঐতিহাসিক পটভূমি :

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত এই দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলমান অধ্যুষিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মূলত দু’টি আলাদা ভূ-খন্ডে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ হলো পশ্চিম পাকিস্তান এবং অন্যটি আমাদের বাংলাদেশ- যার তৎকালীন সময়ে নাম ছিল পূর্ব-পাকিস্তান।

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী। রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজকর্ম, অফিস, আদালত সবকিছু পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। মোটকথা, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কোনো ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা দেয়নি।

পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার পূর্ব পাকিস্তানের উপর দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়। এরই প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ রাতে মেজর জেনারেল টিক্কা খানের নির্দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকার ঘুমন্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালায়। এরপর ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় :

এরপর এদেশের সকল পেশার ও সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলে। যদিও যুদ্ধের নামে চলে গনহত্যা। নির্বিচারে হত্যা করা হয় এদেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষদের । অবশেষে ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে রেসকোর্স ময়দানে পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাঙ্গালীর সম্ভ্রম, রক্ত এর বিনিময়ে সূচনা ঘটে বাংলাদেশের মহান বিজয়।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য :

স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করেছে। বাঙালির জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। প্রতি বছর বিজয় দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম মক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।

জাতীয় কর্তব্য :

আমরা বাংলার সন্তান বাঙ্গালি। বাঙ্গালি হিসাব আমাদের প্রত্যেকেরই এ দিনটির প্রতি কিছু কর্তব্য রয়েছে। কেবল বিজয় দিবসের একটি দিনেই নয় , বরং বিজয়ের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে প্রত্যেক বাঙ্গালির উচিত সারা বছরই দেশ-জাতি, স্বাভীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া।

বিজয় দিবস বাঙ্গালির জীবনে একটি আনন্দের দিন , একই সাথে এটি বেদনারও দিন। প্রতি বছর এ দিবসটি আমাদের মাঝে ঘুরে ফিরে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী লাখো শহিদের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়।

You may also like