২৯৮
১৮৮২ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী স্কিউলার স্কাটস্ হুইলার বৈদ্যুতিক পাখা আবিষ্কারের পর পেশাটি বিলুপ্ত হতে শুরু করে, বর্তমানে একেবারেই বিলুপ্ত। ভাবছি- সেই যুগে একজন রাজা-বাদশার পক্ষেও এমন সুখ উপভোগ করা ছিল কল্পনার অতীত; যা এখনকার একজন সাধারন শ্রমজীবী মানুষ যে সুখ উপভোগ করছেন। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা যে শুধু সুখ উপভোগ করছি তা নয় কষ্ট লাঘব হয়েছে। তারপরও অনেকেই বলতে শুনি যে, আগের যুগই উত্তম ছিলো। বিজ্ঞান ক্ষতিকর। শুধু ক্ষতিকর নয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। আসলেই কি তাই, এটি আদৌ যৌক্তিক দাবি?
ধরুন, এক ব্যক্তি গোপনে একটি গহনা বিক্রি করেছে। তার দাবি সেটি স্বর্ণের। দ্বিতীয় ব্যক্তি সেটি বিশ্বাস করে ক্রয় করেছে। কিন্তু সন্দেহবশত সে আপনার কাছে এসেছে পরীক্ষা করতে। আপনি যথার্থ পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করলেন যে, সেটি খাঁটি স্বর্ণ নয়। এটি হচ্ছে বিজ্ঞান। এখন সেটি ভেজাল প্রমাণিত হওয়ার পর, খুনাখুনি হবে নাকি শান্তি বৈঠক হবে, সেটি ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তার উপর নির্ভর করবে। এখানে অহেতুক বিজ্ঞানকে জড়ানো কেবলই অজ্ঞতা, এবং নিশ্চিতভাবেই বড় ধরণের ভ্রান্তি।
প্রাচীন যুগের মানষ গাছের ছাল পরিধান করে চলতো, ক্ষুধা পেলে খেতো, পাথর দিয়ে আগুন জ্বালাতো, এবং গুহায় রাত্রিযাপন করতো। তখনকার যুগে কিন্তু এগুলোই ছিল সময়ের বিজ্ঞান! গাছের ছাল যে শীত নিবারণ করতে পারে, এই চিন্তাটাই বিজ্ঞান। পাথর যে আগুন জ্বালাতে পারে, এটিও বিজ্ঞান। অর্থাৎ, মানুষের যেকোনো ধরণের প্রগতির চিন্তাই বিজ্ঞান। তাই বিজ্ঞানকে দোষারোপ করা মানে মানুষকেই দোষারোপ করা। এটা নিছক হঠকারী অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের জ্ঞানচর্চা মানে বিজ্ঞানেরই চর্চা। আকাশ, জমিন, এবং জমিনের নিচেও, যাই হোক, সবই বিজ্ঞানের বিষয়।
“ বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ,
কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ ”
অস্বীকার করবো না। তবে, আবেগনির্ভর বাস্তবতা আবেগের মতোই রহস্যপূর্ণ, যা অনেক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও মানুষকে বিজ্ঞানের চিন্তাটাই করতে হবে। কারণ, সত্য অনুসন্ধানের যে পথ বিজ্ঞান অনুসরণ করে, আর সেটি করতে গিয়ে যেটুকু ক্ষতি হয় পৃথিবীর, সেই ক্ষতির পরিমাণ বিজ্ঞানের অনুপস্থিতির ক্ষতির চেয়ে বেশি নয়।