প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট এর নাম সংশোধন।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি অর্থাৎ সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট করা হয়ে থাকে। তাই যদি কারও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট –এ ভুল থাকে তবে অতি সত্তর তার এটি সংশোধন করা উচিত। কিভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সার্টিফিকেট সংশৌধন করা যায় তা আমি এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
অনেকেই জানেন না যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেট কিভাবে সংশোধন করতে হয় এবং কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে সেই সংশোধন করা যাবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেট সংশোধন প্রসঙ্গে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদের বুঝিয়ে দেবো। তাই আপনারা এই পোস্ট মনোযোগ দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
আমাদের দেশে প্রতিবছর পিএসসি এবং পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে এবং আগে কোন ধরনের রেজিস্ট্রেশন না হয়ে থাকার কারণে শিক্ষকেরা নতুন করে করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। এমতাবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট যদি ভুল থাকে তাহলে সেটা খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেই বিষয়টিকে আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেট জীবনের অন্য কোন কাজে লাগুক বা না লাগুক পরবর্তীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট অর্জনের ক্ষেত্রে আপনাদের এটি সংশোধন করা খুবই জরুরী। তুই আপনারা অথবা আপনাদের আশেপাশে যে সকল শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেটে ভুল-ভ্রান্তি থেকে গিয়েছে তারা আমাদের এই পোস্ট থেকে আজকের সকল কিছু জেনে নিন এবং অতি দ্রুত তা ঠিক করে নিন।
অন্যান্য সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করে সংশোধনের কারণ এবং কি কি সংশোধন করা লাগবে তা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে এবং এই সিস্টেম চালু আছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর মূল সার্টিফিকেট যদি আপনারা সংশোধন করতে চান তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে কোনো কাজ করতে পারবেন না। প্রধান কথা হল যে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর যদি সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান তাহলে আপনাদের এই কাজ সম্পন্ন অফলাইনে বা সরাসরি করতে হবে।
অর্থাৎ এগুলো আপনার এলাকার অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে থানার অন্তর্গত সেই থানা শিক্ষা অফিসার অথবা উপজেলা বরাবর আবেদন করে সার্টিফিকেট সংশোধন করা যায়। তাই আপনি যদি অথবা শিক্ষার্থী যদি বাইরের কোন এলাকায় চলে যায় এবং সেই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখা করে, সে ক্ষেত্রে আপনারা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর কাজ করতে হবে।
আপনারা যদি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান তাহলে আপনাদের প্রথমে নির্ণয় করতে হবে যে কি সংশোধন করা প্রয়োজন ? যেটা সংশোধন করা প্রয়োজন সেটার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে এবং সেই কাগজপত্র সঙ্গে একটি আবেদনপত্র আপনারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বরাবর প্রেরণ করবেন এবং প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে সুপারিশ করে নিবেন। অনেকেই হয়তো ভাবছেন কীভাবে আপনার এই সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন লিখবেন। তবে আপনারা আমাদের এখানেই এই আবেদন পত্র লেখার ফরম পেয়ে যাবেন। আপনাদের সুবিধার্থে এই কন্টেন্টের নিচের দিকে তা দেওয়া হয়েছে।
আবেদনপত্রে আপনারা উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদনপত্র লেখার শুরু করবেন। শিক্ষার্থীর বক্তব্যে আবেদন পত্র লিখবেন। তাছাড়া আবেদন পত্রের বিষয় লেখার সময় সার্টিফিকেটের কোন ভুলটি রয়েছে সেটি উল্লেখ করে দেবেন। এভাবে দিতে পারেন (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেটে পিতার নাম সংশোধন প্রসঙ্গে)। এভাবে আপনারা বিষয়টি আপনাদের মত করে এবং সমস্যা অনুযায়ী লিখবেন।
তাছাড়া যেভাবে আবেদনপত্র লিখতে হয় সেভাবে শুরু করবেন এবং শিক্ষার্থী কত জিপিএ পেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে তা উল্লেখ করবেন। তারপরে সার্টিফিকেটের কোন তথ্যটি সংশোধন করা প্রয়োজন তা উল্লেখ করে দিবেন এবং সেই তথ্যটি সংশোধন করে দেওয়ার জন্য থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর অনুরোধ জানাবেন।
আপনারা এই আবেদনপত্রটি নিজের হাতে লিখতে পারেন অথবা টাইপ করতে পারেন। নিচে চারটে ছক কাটবেন। সেই ছকে শিক্ষার্থীর নাম, শিক্ষার্থীর জন্ম তারিখ, পিতার নাম এবং মাতার নাম লিখবেন। সেখানে আপনারা ভুল তথ্যের একটি ঘর রাখবেন এবং সঠিক তথ্যের একটি ঘরের রাখবেন। যে তথ্য পরিবর্তন করা লাগবে সে তথ্য ও ভুল তথ্যের ঘরে লিখবেন এবং কোনটি সঠিক করতে হবে তাও লিখে দেবেন। তাছাড়া যে তথ্য পরিবর্তন করা লাগবে না সেগুলো লেখার দরকার নেই।
সেই আবেদনপত্রটি লেখা হলে আপনারা চলে যাবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কাছে। উনার কাছে আপনারা এই বিষয়ে বলবেন এবং সেই সাথে আপনারা অবশ্যই শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন কার্ড, পিতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং পিএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি দিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে যার তথ্য সংশোধন করা লাগবে সেটি নিয়ে যাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। তারপরও যদি সে সকল কাগজের প্রয়োজন হয় সেই স্বার্থে আপনারা সেসকল কাগজ নিয়ে উপস্থিত হবেন এবং প্রধান শিক্ষকের নিকট এ বিষয়ে জানাবেন।
আবেদন পত্রের প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর করবেন এবং সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনারা চলে যাবেন সরাসরি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা থানা শিক্ষা অফিসার এর কাছে। সেখানে গিয়ে আপনারা ভদ্রতার সহিত এই বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলবেন এবং সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য যে সকল কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন সেগুলো বুঝিয়ে দেবেন। সাধারণত এ সকল কাজ খুবই কম সময়ে হয়ে যায়। আপনার দেওয়া তথ্য এবং কাগজগুলো থানা শিক্ষা অফিসার যাচাই-বাছাই করে সার্টিফিকেট সংশোধন করে দিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে আপনারা যে সকল কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো সত্যায়িত কপি এবং যেসকল কাগজ চাওয়া হবে সেগুলো উপস্থাপন করবেন।
এ পর্যন্ত যে সকল কাজের কথা বললাম সে ক্ষেত্রে আপনাদের কোন ধরনের টাকা-পয়সা খরচ হবে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসার যখন এ তথ্যের যাচাই-বাছাই করে সকল তথ্য সঠিক বলে মনে করবেন তখন তিনি সার্টিফিকেট দেওয়া ভুল তথ্য কেটে দিয়ে সঠিক তথ্য লিখে দিবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই উপজেলা শিক্ষা অফিসার যে ক্ষেত্রে তথ্যটি কাটলেন তার জন্য তিনি সার্টিফিকেট এর উপরে নিজের স্বাক্ষর এবং সিল দিয়ে দিবেন। তাহলে পরবর্তীতে আপনাদের আর কোন ধরনের ঝামেলা হবে না।
উপরের উল্লেখিত নিয়ম যদি একজন অভিভাবক অথবা শিক্ষার্থী অনুসরণ করে তাহলে খুব সহজ উপায়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে অফলাইনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেট সংশোধন করে নিতে পারবেন। তবে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যায় এবং অনেক সময়ই স্থান পরিবর্তন করে।
তবে সে ক্ষেত্রে আপনারা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শিক্ষক অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনারা সকল কাজ সম্পন্ন করবেন। অন্যান্য সার্টিফিকেট সংশোধন করার মতো পিএসসি সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেট পরিবর্তন করা খুব একটা কঠিন কিছু নয় ।
আশা করি আপনারা এই পোষ্টের মাধ্যমে খুব সহজভাবে এবং কম সময়ে থানা শিক্ষা অফিসার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর সার্টিফিকেট সংশোধন করে নিতে পারবেন। তাছাড়া এই ধরনের যদি আপনাদের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে মন্তব্য করুন। তবে উপরে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে কোন ক্ষেত্রে আপনারা টাকাপয়সা লেনদেন করবেন না।
আপনার পরিচিত কোন শিক্ষার্থী অথবা বাড়ির কোন সদস্য অথবা আপনার সন্তানের যদি সার্টিফিকেটে কোন ভুল থেকে থাকে তাহলে আপনারা অতিসত্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে সার্টিফিকেট সংশোধন করে নিন। পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।